কুঁড়েঘর এবং প্রাসাদ ( الكوخ والقصر)। |
আমি যদি কোনো নেয়ামত দেখে কারো প্রতি ঈর্ষান্বিত হই, তাহলে প্রাসাদ-মালিকের প্রাসাদের প্রতি ঈর্ষা করার আগে কুটিরওয়ালার কুটিরের প্রতি ঈর্ষা করব। যদি মানব মনে ভুল-ভ্রান্তির কর্তৃত্ব না থাকত, তাহলে ধনীদের দরবারে দরিদ্ররা ক্ষুদ্র বিবেচিত হত না। আল্লাহকে বাদ দিয়ে ধনীদেরকে দরিদ্ররা খোদা মনে না করলে, তাদের এতো দেমাগ দেখানোর সুযোগ থাকত না।
আমি তো ধনীকে শুধু একটি জায়গায় ঈর্ষা করি, যদি দেখি-সে ক্ষুধার্তকে আহার করাচ্ছে, অভাবীকে সমবেদনা জানাচ্ছে, পিতৃহারা এতীমের, স্বামীহারা বিধবার ভরণপোষণ করছে এবং আর্তপীড়িত ও দুঃখী মানুষের চোখের পানি মুছে দিচ্ছে। এছাড়া সর্বক্ষেত্রে ধনীর জন্য আমার করুণা হয়।
আর যে গরিব, সে সবচে সুখী মানুষ। সবচে শান্তিতে আছে। তবে বোকা এবং ধোঁকাগ্রস্থরাই ধনীকে তারচে সুখে, শান্তিতে ও স্বাচ্ছন্দ্যে আছে বলে ধারণা করে, আল্লাহপ্রদত্ত নেয়ামতপ্রাপ্ত ধনীকে ঈর্ষা করে, আর ঘরের কোণে বসে মনের দুঃখে বড় বড় নিশ্বাস ছাড়ে আর কেঁদে কেঁদে বুক ভাসায়, তার কথা আলাদা। যদি সে মূর্খ ও নিবোর্ধ না হতো, তাহলে নিশ্চয়ই বুঝতে পারত যে, অনেক প্রাসাদের মালিকও গরিবের কুটির ও কুটিরের সাধারণ জীবনই কামনা করে এবং মনে করে, গরিবের নিষ্প্রভ প্রদীপ- যা নিজেকেই আলো দিতে পারে না- তার সামনে থাকা চকমকে মোমবাতির চেয়েও ভালো চলে, ভালো জ্বলে এবং গরিবের পশমের শক্ত বিছানা তার মখমলের বালিশ ও রেশমের তাকিয়ার চেয়েও আরামদায়ক অনেক কোমল।
অনেক মানুষের দুর্বলতা ও হীনমন্যতা এবং নিচু মানসিকতা এমন পর্যায়ে পৌঁছে গেছে যে, তারা ধনীদের পাশে ভীড় না জমিয়ে পারে না, শুধু এ জন্য যে, তারা ধনী, যদিও পিপাসা দূর করার মতো বা গলার কাঁটা সরানোর মতোও কিছু তাদের কাছে পাবে না। হায় আফসোস! সম্পদ যেখানেই পাওয়া যাবে, সেখানেই তার সম্মান-সমীহ করাই যদি কর্তব্য করণীয় হয়ে থাকে, তাহলে মানুষ মুদ্রাব্যবসায়ীর হস্তচুম্বন করে না কেন? স্বর্ণের শেকল পড়ানো কুকুরের সম্মানে দাঁড়ায় না কেন? অথবা তারা জানে যে,ওদের মাঝে আর এদের মাঝে কোনো তফাৎ নেই।
দরিদ্ররা যদি কৃপণ ধনীদের সাথে যথোপযুক্ত আচরণ করত তাহলে ধনীরা নিজেদেরকে নিঃসঙ্গ দেখতে পেত। হায়! তারা যদি বুঝতে পারত যে, তাদের পুঞ্জিভূত স্বর্ণের থলে মূলত পা-পেঁচিয়ে ধরা সাপ, গলা-আটকে ধরা শেকল বৈ কিছু নয়। তাহলে তাদের বুঝে আসত যে, প্রকৃত ইজ্জত-সম্মান হলো পরিপূর্ণ সভ্যতা ও শিষ্টাচারের মাঝে। স্বর্ণের অনুরণনে নয়, কর্মের মাহাত্ম্যের মাঝে, সম্পদের প্রাচুর্যে নয়।
সুতরাং মানুষ যেন সম্মানীতদেরই সম্মান করে, আর ধনীদের অবজ্ঞা করে । তাদের জানা রাখা দরকার যে, ইজ্জত-সম্মান হলো অভাব-সচ্ছলতার ঊর্ধ্বে অন্য কিছু এবং সুখ-সৌভাগ্য হলো প্রাসাদ- কুঁড়ে ঘরের ঊর্ধ্বে অন্য কিছু।