قصة سفر تعليمية في القطار لمحمد تيمور
(এরকম অবস্থায়) ‘মূলীয়্যাহ' নামক একটি কাব্যগ্রন্থ নিয়ে পাঠ করার চেষ্টা করলাম, কিন্তু তাতেও সফল হলাম না। তাই সেটিকে ডেস্কের উপর ছুঁড়ে ফেলে দিলাম। তারপর আসনে বসে নিজেকে ভাবনার (কল্পনার) জগতে সপে দিলাম। মনে হচ্ছে, আমি যেন যুগের থাবার শিকার।
কিছুক্ষণ যাবৎ চিন্তামগ্ন থাকার পর উঠে দাঁড়ালাম এবং আমার ছড়িটা নিয়ে গৃহ ত্যাগ করলাম। চলতে শুরু করলাম অথব আমি নিজেও জানি না আমার দুই পা আমায় কোথায় নিয়ে যাচ্ছে। অবশেষে পৌঁছে গেলাম বাব-উল-হাদীদ' নামক রেল-স্টেশনে। সেখানে দাঁড়িয়ে একটু চিন্তাভাবনা করলাম এবং তারপর সিদ্ধান্তে পৌছালাম যে, অন্তরকে প্রশান্তি দিতে সফর করব। অতঃপর সেকেন্ড ক্লাসের একটা টিকিট ক্রয় করে গ্রালের উদ্দেশ্যে ট্রেনে উঠে পড়লাম, যাতে করে সেখানে পুরো দিনটা কাটাতে পারি।
ট্রেনের একটি কামরায় জানালার নিকটে বসে পড়লাম। আমি ছাড়া সেখানে আর কেউই ছিল না। কিছুক্ষণ বসে থাকতে না থাকতে শুনতে পেলাম এক পত্রিকা বিক্রেতার আওয়াজ। আমার কানে বেজে উঠল: 'ওয়াদি আন-নীল: 'আল-আহরাম' মুকাত্বাম (পত্রিকার নাম)। একটি পত্রিকা কিনে পড়ার মনস্থ করলাম, এমন সময় কামরার দরজাটি খুলে গেল। প্রবেশ করল পাগড়ী পরিহিত এক ভদ্র লোক- তার গায়ের রং বাদামী এবং বেশ লম্বা। তবে শীর্ণকায় ও ঘন দাঁড়ি বিশিষ্ট। আর তার দুই চক্ষু- যার পাতাগুলি কে অলসতা যেন তালাবদ্ধ করে দিয়েছে। মনে হচ্ছে, তিনি এখনো ঘুম থেকে জেগেই উঠেন নি। মহাশয় আমার প্রায় কাছাকাছিই বসলেন। পায়ের উপর পা তুলে বসার পূর্বে নিজের লালজুতাটি খুলে রাখলেন। তারপর মেঝেতে তিন বার থূ-থূ ফেললেন। এবং ঠোঁটদুটি মুছলেন লাল রঙের একটা রুমাল দিয়ে- যা ছোট্ট কোনো শিশুর তোয়ালে হওয়া উপযুক্ত। অতঃপর পকেট থেকে বের করলেন ১০১ টি দানা বিশিষ্ট একটা তসবিহ! শুরু করলেন আল্লাহ্, নবী, সাহাবী, আওলিয়া ও অন্যান্য পীরদের নাম জপতে। তার থেকে আমার দৃষ্টি সরিয়ে নিতেই চোখ পড়ল কামরার ভিতরে এক যুবকের উপর- জানি না সে কোনটা দিয়ে প্রবেশ করেছে আমাদের মাঝে। সম্ভবত উক্ত মহাশয়ের প্রতি এতক্ষণ দৃষ্টিপাভ করে থাকার জন্য তরুণটির প্রবেশের ব্যাপারে কিছু বুঝতে পারি নি।
তরুনটির প্রতি আমি দৃষ্টি স্থির করলাম এবং আমার বিবেকে জেগে উঠল যে, নিশ্চিত সে একজন গ্রামীণ ছাত্র, যে তার পরীক্ষা সমাপ্ত করে নিজ পরিবার ও গোত্রের মাঝে ছুটি কাটানোর জন্য গ্রামে ফিরছে। ছেলেটি আমার দিকে তাকাল; যেভাবে আমি তার দিকে তাকিয়েছিলাম। তারপর সে তার ব্যাগ থেকে জাতীয় গল্পগুজবমূলক একটি উপন্যাস বের করে মহাশয়টির ও আমার উপর থেকে তার দৃষ্টি সরিয়ে নিয়ে তা পড়তে শুরু করল। তখন আমি ঘড়ির দিকে এ আশা নিয়ে একটু তাকালাম যে, চতুর্থ কোনো যাত্রী আমাদের মাঝে আসার পূর্বেই ট্রেনটি হয়তো ছেড়ে দিবে। হঠাৎই উজ্জ্বল চেহেরা ও গড়ন গঠনের এক ভদ্রলোক আমাদের কামরায় প্রবেশ করলেন, যার চালচলনে অহমিকার ছাপ স্পষ্ট। তিনি গুনগুন করে একটি গান গাইছেন, যে গানটি আমি ইতিপূর্বে কোনো এক শাক-সব্জি বিক্রেতার (মুখ) থেকে শুনেছিলাম। তারপর পায়ের ওপর পা রেখে মুচকি হাসতে হাসতে বসে পড়লেন এবং অপরিচিত ব্যক্তির মতো আমাদের মধ্যে ‘সালাম' আদান-প্রদান হল ।
(এরপর) কামরার ভিতরে নীরবতা বিরাজ করছিল। ছাত্রটি তার উপন্যাস পাঠে ব্যস্ত ছিল। হুজুর সাহেব বাস্তব জগত থেকে হারিয়ে তসবীহ পাঠে মগ্ন ছিলেন। আফিন্দী মহাশয় একবার নিজের পোশাক ও অন্যবার যাত্রীদের প্রতি চেয়ে দেখছিলেন। আর আমি ‘ওয়াদি আন-নীল' পত্রিকা পড়ছিলাম এবং অপেক্ষারত ছিলাম যে, পঞ্চম কোনো যাত্রী আমাদের মাঝে আসার পূর্বেই হয়তো ট্রেনটি ছাড়বে।
কয়েক মুহূর্ত কথাবার্তা না বলে আমরা (নির্বাক হয়ে) বসে থাকলাম। যেন আমরা কারো আগমনের অপেক্ষায় রয়েছি। এমন সময় কামরার দরজা উন্মুক্ত হয়ে গেল; প্রবেশ করল বয়স ষাটের একজন বৃদ্ধ লোক- লালচে চেহারা, উজ্জ্বল চক্ষু তারা। তার ত্বকের রং দেখে বোঝা যাচ্ছিল যে, তিনি নিশ্চিত খাঁটি ‘শারকসী' ব্যক্তি হবেন। তার হাতে রয়েছে এমন একটি ছাতা, যেটিকে যুগ গ্রাস ও পান (জীর্ণশীর্ণ) করে ফেলেছে। তার ফেজ টুপির তার দুই কানের প্রন্তে ঝুলছিল। অতঃপর তিনি আমার সামনে বসে পড়লেন এবং মনোযোগ দিয়ে তার মুসাফির বন্ধুদের প্রতি চেয়ে থাকলেন। (তার এই অবলোকন) যেন জিজ্ঞাসা করতে চাইছে যে, তারা কোথা থেকে আসছে এবং যাবেই বা কোথায় ? তারপর ট্রেনের বাঁশি বেজে উঠল, যা যাত্রীদেরকে রওয়ানার ব্যাপারে বার্তা দিচ্ছিল। অল্প কিছুক্ষণ পরেই ট্রেন তার যাত্রীদের গন্তব্যস্থলের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করল।
ট্রেন চলছে, আমরা কোনো কথা উচ্চারণ না করে বসে রয়েছি, যেন আমাদের মাথার উপরে পাখি (উপবিষ্ট)। এতক্ষণে ট্রেন প্রায় ‘শুবরা' স্টেশনের কাছাকাছি। শারকসী ব্যক্তিটি আমার প্রতি চেয়ে থেকে আমাকে উদ্দেশ্য করে বললেন:
"নতুন কোনো খবর-টবর আছে নাকি হে মহাশয় ?"
পত্রিকটা হাতে ধরে থেকেই আমি তাকে বললামঃ
“দৃষ্টি আকর্ষণ করার মতো কোনো খবর তো দেখছি না, তবে একটা খবর রয়েছে- "শিক্ষা সর্বত্রীকরণ ও নিরক্ষরতা দূরীকরণ-" এ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ভুমিকা সংক্রান্ত।"
আমাকে কথা শেষ করারও অবকাশ দিল না লোকটি, হঠাৎই আমার হাত থেকে পত্রিকাটি কেড়ে নিয়ে অনুমতি ছাড়াই পড়তে শুরু করল চোখের সামনে যা পেল তাই। তার এরূপ কান্ড দেখে আমি আশ্চর্যান্বিত হলাম না। কারণ, শারকাসী ব্যক্তিদের বদ-মেজাজের ব্যাপারে আমি ভালোভাবেই অবগত। কিছুক্ষণ পরেই ট্রেন পৌঁছে গেল ‘শুবরা' স্টেশনে। (সেখানে) আমাদের কামরায় আরোহণ করলেন ‘কালইউরিয়্যা'র একজন নেতৃস্থানীয় ব্যক্তি। যার স্থূলকায় দেহ, বড়ো বড়ো গোঁফ ও চ্যাপ্টা নাক। তার মুখাবয়বের উপর গুটিবসন্তের দাগ রয়েছে। দেখে বোঝা যাচ্ছিল যে, তিনি বেশ প্রভাবশালী ও বোকা প্রকৃতির হবেন। সেই প্রধান সাহেব সুরাহ ফাতিহা ও নবী (সাঃ) এর উপর দরুদ পাঠ করে আমার নিকটে বসে পড়লেন। তারপর ‘কালইউব'-এর উদ্দেশ্যে ট্রেন চলতে শুরু করল।
কিছুক্ষণ ধরে শারকাসী ব্যক্তিটি পত্রিকা পাঠ করলেন। তার পর সেটিকে ভাঁজ করে মেঝেতে ফেলে দিয়ে দাঁত কাটতে কাটতে বললেন:
"এরা শিক্ষার সর্বজনীনকরণ ও নিরক্ষরতা দূরীকরণ' চায়, যাতে করে চাষীরা তাদের নেতামাতাদের পর্যায়ে উন্নীত হতে পারে। তারা বিরাট একটা অপরাধ করছে, যা তারা নিজেরাও জানে না।” মেঝে থেকে পত্রিকাটি তুলে নিয়ে আমি বললাম:
"কোন অপরাধ হে ?"
(শারকাশী বললেন): " তুমি এখনো তরুণ, তুমি কৃষকদের উন্নতির উপযুক্ত চিকিৎসার ব্যাপারে কিছুই জানো!"
"কোন চিকিৎসার কথা বলছেন? শিক্ষার চেয়ে উপকারী আর কোনো চিকিৎসা রয়েছে কি ?"(লেখক বললেন)। শারকাসী তার ভ্রূকুটি করে রাগান্বিত স্বরে বললেন:
"আছে, অন্য একটা বিশেষ চিকিৎসা আছে।”
“কী সেটা" -(লেখক জানতে চাইলেন)।
অতঃপর তিনি খুব জোরে চিৎকার মারলেন, -যাতে হুজুর সাহেবও ঘুম থেকে জেগে উঠলেন। (চিৎকার সেরে) বললেন: চাবুক! চাবুক সরকারের উপর বেশী বোঝ চাপিয়ে দেয় না। কিন্তু শিক্ষা- যার জন্য প্রচুর অর্থ-সম্পদ ব্যয়ে দাবি রাখে। আর একথা ভুলে যেও না যে, কৃষকরা ‘প্রহার' (চাবুক) ব্যতীত বশ্যতা স্বীকার করবে না। কারণ, তারা দোলনা (মায়ের কোল) থেকে কবর পর্যন্ত এতেই অভ্যস্ত!
শারকাশীকে আমি এর উত্তর প্রদান করার ইচ্ছা করছিলাম এমন সময় প্রধান সাহেব নিছক একটা হাসি মেরে বলে উঠলেন:
"আপনি সত্য বলেছেন হে বেক! আপনি সত্য বলেছেন। যদি আপনি আমাদের মতো গ্রামে বাস করতেন, তাহলে এর চেয়েও বেশি কিছু বলতেন। আমরা চাষীদের সাথেই উঠাবসা করি এবং তাদের জিদকে দাবিয়ে রাখি আর অপরাধ প্রবণতা থেকে তাদের কে বাধা প্রদান করে থাকি।
শারকাসী সন্দেহের দৃষ্টিতে আমার দিকে এক ঝলক তাকিয়ে বলে উঠলেন:
"শ্রদ্ধেয় (প্রধান সাহের)! আপনারা কি গ্রামে বাস করেন?"
"আমি তো সেখানেই জন্মেছি, হে বেক!”
"মা-শা- আল্লাহ্।"
কথোপকথন চলতেই থাকল। হুজুর সাহেব ঘুমের মধ্যে নাক ডাকতে ব্যস্ত। সুন্দর গড়ন গঠন বিশিষ্ট আফিন্দী সাহেব একাবার নিজ পোশাকের দিকে দেখছেন, অন্যবার আমাদের দিকে তাকিয়ে হাসি ছাড়ছেন। আর ছাত্রটি- তার চেহারার উপর বিরক্তির ছাপ স্পষ্ট। সে বেশ কয়েকবার কথা বলার মনস্থ করল; লজ্জা বা বয়সে ছোট হওয়ার বিষয়টা তাকে বাধা দিচ্ছিল না। আর শারকাসী যেসব কথাবার্তা বললেন, সেগুলি শুনে আমি আর চুপ থাকতে না পেরে বলে উঠলাম:
“হে বেক! কৃষকরাও তো মানুষ। আচার আচরণে একজন মানুষ তার ভ্রাতার প্রতি সদয় হবে না- এমনটা তো হারাম।"
অতঃপর প্রধান সাহেব আমার দিকে চেয়ে দেখলেন, যেন আমি তাকে উদ্দেশ্য করেই কথাটা বলেছি। অতঃপর বলে উঠলেন:
“আমি চাষীদের ব্যাপারে সবচেয়ে বেশী জানি। আর আমার একটা বিশেষ সম্মান রয়েছে যে, এক হাজার জনসংখ্যা বিশিষ্ট জন-পদের প্রধান আমি। যদি আপনি চাষীদের কার্যকলাপ নিয়ে জানতে চান, তাহলে আপনাকে আমি বলব:
"নিশ্চয় মহাশয় (বিশ্বাস করুন) কৃষকরা চাবুক/মার ব্যতীত সোজা হবে না! আব বেক সাহেবও যথার্থই বলেছেন" -শারকাসীর প্রতি ইশারা দিয়ে বললেন।
অতঃপর শারকাসী আহমিকার এক হাসি মেরে বললেন:
“অভিজ্ঞ ব্যক্তির মতো কেউ আপনাকে আর সংবাদ দিতে পারবে না।"
ছাত্রটি ক্রোধান্বিত হয়ে উঠল। সে আর চুপ থাকতে পারল না। কাঁপতে কাঁপতে সে বলে উঠল:
কৃষক, হে মেয়র (প্রধান) সাহেব.....।"
প্রধান সাহেব তার কথায় বাধা দিয়ে বলে উঠলেন:
“আমাকে ‘শ্রদ্ধেয় বেক' বলে সম্বোধন করো (হে তরুন)! কেননা, আমি বিশ বছর ধরে (সম্মানীয় এই) দ্বিতীয় পদ মর্যাদায় রয়েছি।”
অতঃপর ছাত্রটি বলতে লাগল:
“ওহে মেয়ূরসাহেব। কৃষকেরা প্রহার ব্যতীত আপনাদের বিষয়াদিতে আনুগত্য প্রদর্শন করে না। কারণ, আপনারা তাদেরকে এটা ছাড়া অন্য কিছুতে অভ্যস্ত করে রাখেন নি। যদি আপনারা তাদের সাথে উত্তম আচরণ করতেন, তাহলে তাদের মাঝে ত্রাতৃত্ববোধ খুঁজে পেতেন। তখন তারা আপনাদের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে থাকত এবং আপনাদেরকে সাহায্য করত। কিন্তু দুঃখের বিষয়, আপনারা তাদের অনিষ্ট করেন। ফলে তারা অপিনাদের অনিষ্ট থেকে ত্রাণ পেতে আপনাদের প্রতি অনিষ্ট করতে উদ্যত হয়। আর আমাকে এই ব্যাপারটা খুব হতচকিত করছে যে, আপনি নিজেও একজন কৃষক হয়ে আপনার কৃষক ভাইদের নিন্দা করতে উদ্যত হয়েছেন!"
তখন প্রধান সাহেব তার মাথা ঝাঁকুনি দিলেন এবং শারকাসীর দিকে চেয়ে বললেন:
“এটাই, এটাই হচ্ছে শিক্ষার নাতিজা (ফল)!"
অতঃপর শারকাশী বললেন:
"ঘুম থেকে উঠে সে নিজেকে প্রতিনিধি হিসেবে দেখতে পেল।"
সুগড়ন গঠনের অধিকারী আফিন্দী– তিনি হা-হা করে হাসতে হাসতে হাত তালি দিয়ে ছাত্রটিকে বললেন:
“সাবাশ বাপু সাবাশ!"
অতঃপর শারকাসী তার দিকে তাকালেন; তার শাহরগ (ক্রোধে) ফুলে উঠল এবং শ্বাস-প্রশ্বাস নেওয়া কঠিন হয়ে পড়ল তার। অতঃপর বললেন:
"আপনি কে হে মশাই ? (!) "
"আমি হলাম সৌজন্য ও প্রাচুর্যের সন্তান, হে বন্ধু!"- (আফিন্দীর জবাব, অহমিকার স্বরে ও সুরে)। (একথা বলেই) তিনি বেশ কয়েকবার হাসি দিলেন।
তখন শারকাশীর ধনুকে আর কোনো তীর বাকী থাকল না (অর্থাৎ উত্তর খুঁজে পেলেন না)। ফলে তিনি খুব জোরে চিৎকার মারলেন এবং মেঝেতে কয়েকবার থূ-থূ ফেললেন, অতঃপর- উসতাজের জামাতে, তারপর প্রধান সাহেবের জুতায়ও থূ-থূ ফেলে বললেন:-
أدب سيس فلاح. (হ-য-ব-র-ল)
তারপর তিনি নীরব হলেন। নিশ্চুপ হল বাকিরা। এতক্ষণের ঘূর্ণিঝড় (তর্কবিতর্ক) প্রায় প্রশমিত হওয়ার উপক্রমে এসে পড়েছিল এমনসময় প্রধান সাহেব হুজুর সাহেবের দিকে তাকিয়ে বললেন:
"মহানায়! আপনি (আমাদের মাঝে) সবচেয়ে বেশি জ্ঞানী। অতএব আমাদের এই মকদ্দমার ব্যাপারে আপনি একটা ফয়সালা করে দেন।"
হুজুর সাহেব তার মাথা নাড়ালেন, গলা খাঁকার দিলেন এবং মেঝেছে থূ-থূ ফেলে বললেন:
“ঝামেলাটা কী নিয়ে (বলুন)? আল্লাহর ওয়াস্তে আমি বিচার করে দেব।"
"কৃষকদের জন্য "শিক্ষা বেশী উপকারী নাকি ‘প্রহার’ ?”
অতঃপর হুজুর সাথে বললেন:
"বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম। আমরা আপনাকে এক বিজয়ে বিজয়িত করেছি।" আর নবী (সাঃ) বলেন- "তোমরা নিম্নশ্রেণীর সন্তান সন্তনিদের শিক্ষা-দীক্ষা দিতে যেও না।" (!!)
(একথা বলে) হুজুর সাহেব ঝিমিয়ে পড়লেন। তার চোখের পাতাগুলিকে বেখেয়ালের জগতে শপে দিলেন।
ছাত্রটি তৎক্ষণাৎ হেসে উঠল এবং বলল:
"হে হুজুর সাহেব! এটা হারাম। উত্তম চরিত্রের দিক দিয়ে ধনী-দরিদ্রের মাঝে কে উপরের স্তরে আর কে নীছে-(তা সবারই জানা)।
হুজুর সাহেব তার মূর্ছাবস্থা থেকে জেগে বললেন:
"দুর্ভোগ! তোমরা যেদিন থেকে বিদেশী শিক্ষা গ্রহণ করতে শুরু করেছ সেদিন থেকে তোমাদের স্বভাব-চরিত্র বিগড়ে গেছে। (তখন থেকে) নিজ ধর্মের বিধিবিধান তুলতে শুরু করেছ। তোমরাই সেসকল লোক যারা সদর্পে চলে থাকো, অন্যায় করো, বড়াই করো এবং স্রষ্টার অস্তিত্বকে অস্বীকার করো।”
তখন শারকাসী ও প্রধান সাহের সজোরে বলে উঠলেন:
"আল্লাহ্ আপনার সহায় হোন, হুজুর সাহেব।"
শারকাসী আরো বললেন:
"একটা সময় ছেলে নিজ পিতার সাথে বসে খেতেও ভয় করত। কিন্তু এখন তাকে গালি তো দেয়ই, এমনকি থাপ্পড় মারতেও উদ্যত হয়।"
এবার প্রধান সাহেব (গলা মিলিয়ে) বললেন:
"একটা সময় কোনো ছেলে তার চাচীর চেহারার দিকেও তাকাত না। কিন্তু এখন ভাবীর সাথে বসে আড্ডা মারে।"
(ইতিমধ্যে) ট্রেইন ‘কালইউব’ স্টেশনে এসে দণ্ডায়মান হয়ে গেছে। আমরা সকলে "সালাম বিনিময় করলাম। তাদের ত্যাগ করে আমি রাস্তা ধরে গ্রামের দিকে এগিয়ে চললাম। ধীরে ধীরে ট্রেইন চলার শব্দ ও তার বাঁশির আওয়াজ কমে আসছিল; যেন তা সবুজ বাগিচার মাঝে প্রত্যাবর্তিত হচ্ছিল। কেননা, তখনও আমার কর্ণকুহরে কথোপকথনের প্রতিধ্বনি ধ্বলিত হচ্ছিল।