স্পেনের একজন শ্রেষ্ঠ পন্ডিত ও চিন্তাবিদ আলী ইবনে হাজম।

আলী ইবনে হাজম (৯৯৪-১০৬৪)


ভূমিকা: আলী ইবনে হাজম ছিলেন একাদশ শতকের মুসলিম স্পেনের একজন শ্রেষ্ঠ পন্ডিত ও চিন্তাবিদ। তিনি বিভিন্ন বিষয়ে অনন্য প্রতিভার অধিকারী ছিলেন। যেমন- ইতিহাস, ধর্ম শাস্ত্র, দর্শনশাস্ত্র, ভূগোল শাস্ত্র এছাড়া আরো অনেক বিষয়ে।


জন্ম ও পরিচিতি:
ইবনে হাজম ৯৯৪ সালের ৭ ই নভেম্বর বর্তমান স্পেনের কর্ডোভায় জন্মগ্রহণ করেন। তার পুরো নাম আবু মোহাম্মদ আলী বিন আহমাদ বিন সাঈদ বিন হাজম। তার পূর্বপুরুষ গণ পারস্যের অধিবাসী ছিলেন। তিনি বিশ্বের শ্রেষ্ঠ মুসলিম দার্শনিকদের মধ্যে অন্যতম। তিনি ছিলেন ইসলামের জাহেরী ধারার প্রবক্তা ও সংকলক। তাকে তুলনামূলক ধর্মতত্ত্বের জনক বলা হয়। হাজমের পূর্বপুরুষরা ছিলেন খ্রিস্টান, তার প্রপিতামহ ইসলামে দীক্ষিত হয়েছিলেন।

শিক্ষাজীবন: তার পিতা ও দাদা উভয়েই ওমাইয়া খলীফার দরবারে উপদেষ্টার পদে নিয়োজিত ছিলেন তাই তার শিক্ষাজীবন খলিফাদের সন্তানদের মতোই শুরু হয়েছিল। তিনি তার পিতার ব্যক্তিত্বের দ্বারা প্রভাবিত হয়েছিলেন এবং তার কাছ থেকে অলংকার শাস্ত্র অধ্যয়ন করেন। তাছাড়া তদানীন্তন জ্ঞানীগুণীদের কথা বক্তৃতা শ্রবণ করতেন। তার শিক্ষকদের মধ্যে অন্যতম হলেন আব্দুর রহমান ইবনে আবি ইয়াজিদ।

কর্মজীবন: ১০০৮ সালে উজির আল-মুজাফফর ইন্তেকাল করলে কর্ডোভা শাসনের ভাঙ্গন শুরু হয়। এবং ১০০৮ থেকে ১০৩১ সাল পর্যন্ত সেখানে বারবার রা এক একটি স্থান দখল করতে থাকে এবং এর ফলে তার পিতা এবং দাদার চাকরি হারিয়ে যায়। এমনকি ১০১২ সালে তার পিতা মারা যান তাছাড়া তার দেশের বাড়িতে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়। তিনি উমাইয়াদের সমর্থন করতেন সেই কারণে তাকে কারাবাস ও হতে হয়। তিনি ১০৩১ সাল পর্যন্ত তিনজন শাসনকর্তার উজির হিসাবে অধিষ্ঠিত ছিলেন।
১) আল-মুরতাজা (দ্বিতীয় আব্দুর রহমান)
২) মুসতাজহির (পঞ্চম আব্দুর রহমান)
৩) হিশাম আল মু'তাদ। পরবর্তীতে তিনি রাজনীতি শুরু করেন এবং এই রাজনীতি তার জীবনের বাধা সৃষ্টি করে এমনকি তার বন্ধুরাও এর বিরোধিতা শুরু করে। এর পরে তিনি রাজনীতি ত্যাগ করেন এবং তিনি তার গ্রামের বাড়িতে ফিরে আসেন।

শেষজীবন: তিনার জীবনের শেষ ৩০ বছর লেখালেখির কাজে মনোনিয়োগ করেন। এবং লেখালেখির মধ্যে তিনি সরকারের বিরুদ্ধেও লেখেন। তার কর্ম রাজির অন্যতম লেখনী হলো طوق الحمامة । তিনি ১৬ বছর বয়সে গ্রন্থটির লেখা শুরু করেন যদিও তখন সেটা সম্পূর্ণ হয়নি। অবশেষে ১০২২ খ্রিস্টাব্দে আবার শুরু করেন, অবশেষে ১০৩১ খ্রিস্টাব্দের পরে এটা সম্পূর্ণ হয় তিনি আলোচ্য বইটির নামকরণ করেন ভালোবাসার প্রতীক হিসাবে। আলোচ্য বইয়ে তিনি আলোচনা করেন প্রেমিক এবং প্রেমিকার মধ্যে যেসব অনুভূতি, রাগ, ঘৃণা, মান-অভিমান এবং তাদের মধ্যে মিথ্যা কথা বলা সেগুলো কেন হয় সে সম্পর্কে তিনি বিস্তারিতভাবে আলোচনা করেন।

তিনি চারটি সুন্নাহ ও জামায়াত ত্যাগ করে দাউদ আল জাহেরী প্রতিষ্ঠিত সম্প্রদায়ের অনুসরণ করেন। এ সম্প্রদায়ের মতানুসারে শাব্দিক অর্থের প্রেক্ষিতে কোরআন ব্যাখ্যা করা উচিত, তার মতে অন্যের ব্যাখ্যা না দেখে প্রত্যেকের উচিত তার নিজের সাধ্যমত কোরআনের ব্যাখ্যা করে তার মমার্থ বার করা।

তিনি একটি বই লিখলেন যার নাম "الإحكم في أصول الأحكم"। আলোচ্য বইটিতে তিনি উসুলে ফিকহ অর্থাৎ আকিদা সম্পর্কে আলোচনা করেন। كتاب المحلي ইসলাম ফিকাহ সম্পর্কে আলোচ্য বইটি রচিত। আলোচ্য বইটিতে তিনি মানব সম্প্রদায়ের চরিত্র সম্পর্কে আলোচনা করেন এবং এর মধ্যে পাঁচটি জিনিস বিশেষভাবে ব্যাখ্যা করেন যে বর্ণনা গুলি করেছেন সেটা জাহেরী মতবাদ এবং শিয়াদের অনুকরণে তিনি বর্ণনা করেন ফরজ, হারাম, হালাল, মাকরুহ, মুবাহ সম্পর্কে।

মৃত্যু:
১০৬৪ খ্রিস্টাব্দে ১৫ ই আগস্ট তিনি মৃত্যুবরণ করেন। তিনি ৪ হাজার পৃষ্ঠা লেখেন এবং 400 টি বই লিখেন কিন্তু বর্তমানে চল্লিশটি বই পাওয়া যায়।

উল্লেখযোগ্য কয়েকটি বইয়ের নাম হল।

.الفصل في الملل والأهواء والنحل
كتاب المحلى بالآثار في شرح المجلى بالاختصار/ يعد هذا الكتاب واحداً من أهم كتب الفقه الإسلامي
كتاب الإحكام في أصول الأحكام
طوق الحمامة
الإيصال إلى فهم كتاب الخصال
الخصال الحافظ لجمل شرائع الإسلام
Post a Comment (0)
Previous Post Next Post