أمير الشعراء أحمد شوقي (আহমাদ শাওকী)
জন্ম ও বংশ পরিচয়: কবি আহম্মদ শাওকী ১৮৬৮ খ্রি: মিশরের রাজধানী কায়রো' মহানগরীতে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম আলী ইবনু আহম্মদ শাওকী এবং কবির পিতামহ ছিলেন কুর্দিস্তানের একজন অধিবাসী।
বাল্যকাল: আহম্মদ শাওকী তিন বছর মায়ের যত্নে লালিত-পালিত হন। মায়ের মৃত্যুর পর নানী শিশু শাওকীর লালন-পালনের দায়িত্ব নেন, যিনি ছিলেন ইসমাইল পাশার শাহী দরবারের একজন পরিচারিকা। তাই কবি রাজদরবারে আনন্দঘন পরিবেশে বড় হয়ে উঠেন।
শিক্ষাজীবন: কবি আহম্মদ শাওকী অতি শৈশবকাল হতেই অত্যন্ত মেধাবী ছিলেন। অল্প দিনের মধ্যেই শিশু শিক্ষা সমাপ্ত করেন। চার বছর বয়সে তাঁর মাতামহী তাঁকে কায়রোর হানাফী মহল্লায় অবস্থিত 'শাইখ সলেহ্' নামক প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি করে দেন। তিনি অতি কৃতিত্বের সাথে প্রাথমিক বিদ্যালয় হতে পাঠ সমাপ্ত করেন।
কর্মজীবন: আহম্মদ শাওকী ফ্রান্স থেকে শিক্ষা সমাপ্তান্তে ১৮৯১ খ্রি: সরকারি চাকুরিতে নিযুক্ত হন। এ ছাড়াও তিনি অনুবাদ বিভাগে কাজ করেন। শেষ পর্যন্ত ইউরোপীয় দপ্তরের মহাপরিচালকও নিযুক্ত হন। ১৮৯৪ খ্রি: জেনেভায় প্রাচ্যবিদদের যে আন্তর্জাতিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় তাতে তিনি মিশরের প্রতিনিধিত্ব করেন।
প্রবাস জীবন: প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় (১৯১৪-১৮) খেদিভ ২য় আব্বাস সিংহাসনচ্যুত হলে কবি আহম্মদ শাওকী বন্ধুবান্ধবের পরামর্শে ১৯১৫ খ্রিঃ স্পেনে চলে যান এবং সেখানে ৪/৫ বছর প্রবাস জীবন কাটান। যত দিন শান্তি প্রতিষ্ঠিত না হয় ততদিন মিশরে আসেননি।
স্বদেশ প্রত্যাবর্তন: রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর ১৯১৯ খ্রি: আহম্মদ শাওকী স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করেন। কিন্তু সরকারিভাবে কোনো সুযোগ-সুবিধে তাঁর ভাগ্যে আর জোটেনি। এখানেই কবির জীবনের মোড় ঘুরে যায়।
কাব্য চর্চা: সরকারি সহায়তা না পেয়ে কবি তাঁর প্রকৃত মূল পেশা কাব্য চর্চায় পুরোপুরিভাবে আত্মনিয়োগ করেন। তখন হতে তিনি খোদাপ্রদত্ত প্রজ্ঞা ও প্রতিভা, অনুভুতি, চিন্তাশক্তি এবং অভিনব কাব্য পদ্ধতি তথা সব কিছু প্রয়োগ করে আরবী সাহিত্যে উন্নতি বিধানে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালান। তাঁর এ প্রচেষ্টায় তিনি সফলতা অর্জন করেন।
মৃত্যু: কবি আহম্মদ শাওকী ১৯৩২ খ্রি: ১৪ অক্টোবর প্রভাতকালে আধুনিক আরবী কাব্য সাহিত্যের নক্ষত্র আহম্মদ শাওকী ইহধাম ত্যাগ করেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৬৪ বছর। বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত ও আরব বিশ্বের প্রখ্যাত ব্যক্তিবর্গের উপস্থিতিতে রাজকীয় অপেরা হাউজে এক শোকসভা অনুষ্ঠিত হয়।
চরিত্র: আহম্মদ শাওকী অত্যন্ত সংযমী, ভাবগম্ভীর এবং আত্মসচেতনাসম্পন্ন অসাধারণ মেধার অধিকারী ছিলেন। কবি হিসেবে তিনি আব্বাসীয় যুগের অন্যতম কবি মুতানাব্বীর অনুসারী। তিনি অতীব সুশ্রী, সুপুরুষ, নরম মেজাজের ও পরিমিত হাস্য-রসিক ছিলেন।
উপসংহার: পরিশেষে বলা যায় যে, কবি আহম্মদ শাওকী ছিলেন একজন স্বভাবকবি। যিনি তাঁর কাব্যের নব চেতনার উম্মেষ ঘটিয়ে আরবী ভাষাকে সমৃদ্ধশালী করেছেন এবং জনগণের দুঃখ দুর্দশা সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক চিন্তাধারা তাঁর কাব্যে তুলে ধরেছেন।